,

নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউপির রাস্তার নিরব কান্না, দেখার যেন কেউ নেই!

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার একমাত্র সড়ক পাকাকরণ কাজে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৩ মাস আগে রাস্তার কাজ সমাপ্তির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কোন অগ্রগতি নেই কাজের। সামান্য বৃষ্টির পরই মনে হয় রাস্তাগুলো যেন ধান বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পায়ে হেটেও মানুষ চলাচল করতে পারেনা। ফলে ইউনিয়ন অফিসে সেবা নিতে যাওয়া জণসাধারণ পড়েছেন চরম বিপাকে। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নে গদার বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে (দেওপাড়া-শতক) পাকা সড়ক পর্যন্ত সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাভূক্ত। ৭৪০ মিটারের রাস্তাটি প্রায় ৫৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৪ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় এলজিইডি’র তালিকাভূক্ত লাখাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জেসান এন্টারপ্রাইজ’। এলজিইডি‘র তথ্য মতে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ১৬ মে এবং শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের ২১ মে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের নভেম্বর মাসে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার একমাত্র সড়কটির নির্মাণে কাজ শুরু করে। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ যেনতেনভাবে সম্পন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। রাস্তার নির্মাণ কাজে ৬ ইঞ্চি বালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বালুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় পাহাড় কেটে উজার করে নিয়ে আসা লাল মাটি। তখন অভিযোগ উঠে ‘স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ইশারায় সড়কের পাশে লামরোহ গ্রাম থেকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহার করা হয় রাস্তায়’। বালুর পরিবর্তে পাড়ারের লাল মাটি ব্যবহারের ঘটনায় এলাকাজুড়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এনিয়ে ফলাও করে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে পাহাড় কাটা বন্ধে তৎপরতা চালায় প্রশাসন। এরপর থেকেই রাস্তার কাজ বন্ধ রেখে উধাও হয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। পরে এভাবেই কেটে যায় মাসের পর মাস। এবার বৃষ্টিতে কাদা জমেছে সড়কে, ফলে চরম বিপাকে পড়েন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। ইউনিয়ন অফিসে সেবা গ্রহিতাদের দুর্ভোগের তো কোন শেষই নেই। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, একটি ইউনিয়ন পরিষদের একমাত্র রাস্তা এমনকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার নির্মাণকাজে অনিয়ম হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। গত ১৫ দিন পূর্বে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় শিশু সন্তানসহ এক মহিলা পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা দেখে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনে দয়া মায়া না হলেও ওই এলাকার এক সৌদি প্রবাসী রাস্তায় বালু ভর্তি কয়েকটি বস্তা ফেলে দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়ার একটি সুযোগ করে দেন। এ অবস্থা থেকে অধিকার কিংবা অভিযোগের সুরে নয়, ফরিয়াদির মত প্রতিকার চান ভোক্তভোগীরা। এ বিষয়ে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতোদিন ধরে তারা কি করছেন, রাস্তার কাজ কবে নাগাদ আবার শুরু হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাহারো বক্তব্য সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে বালু ফেলার পর, এতে কিছ’ অনিয়ম হলে ঠিকাদারকে সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়, কিন্তু সে কোন কথা শুনেনি। তাই কোন বিল দেয়া হয়নি। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোন পর্ণপাত করেনি। এই কাজ বাতিল করতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’


     এই বিভাগের আরো খবর